আয়কর সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় (২০২৫-২০২৬ করবর্ষ) আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় হচ্ছে নভেম্বর মাস। বিগত অর্থবছরে (জুলাই ২০২৪- জুন ২০২৫) আপনার করযোগ্য আয়ের উপর কর নির্ধারণ ও কর রিটার্ন দাখিল করতে হয় নভেম্বর ২০২৫ মাসের মধ্যে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে আপনার আয়বর্ষ ২০২৪-২০২৫ এবং করবর্ষ ২০২৫-২০২৬।
তবে প্রথমবার যারা আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন, তারা আগামী ৩০ জুন ২০২৬ তারিখ পর্যন্ত বিনা জরিমানায় আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
তবে করদাতাদের সুবিধার্থে মাঝে মধ্যে রিটার্ন জমা দেয়ার সময় বৃদ্ধি করা হয়। আইনগত ঝামেলা থেকে বাঁচতে সবসময় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনার আয়কর রিটার্ন জমা দিন।
কিভাবে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করব? etaxnbr.gov.bd ওয়েবসাইট ভিজিট করে টিন নাম্বার ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ করার আগে, আপনার বিগত আয়বর্ষের সকল আয় ও ব্যয় এবং উৎসে কর পরিশোধের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
ই রিটার্ন সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করার নিয়মঅনলাইনে ই রিটার্ন জমা দেয়ার জন্য, আপনার TIN ও নিজ নামে রেজিস্ট্রেশন করা মোবাইল নম্বর দিয়ে ই রিটার্ন সিস্টেমে সাইন আপ বা রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
ই রিটার্ন সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
ধাপ ১ঃ রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রথমে এই লিংকে ভিজিট করুন- E-Return Registration
প্রথম বক্সে আপনার টিআইন (TIN) নম্বরটি লিখুন। তারপর আপনার নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র দ্বারা বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন করা আছে এমন মোবাইল নম্বরটি লিখুন (প্রথম শুন্য বাদে)। এরপর ক্যাপচা কোডটি সঠিকভাবে লিখুন এবং সবশেষে Verify বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ২ঃ এই ধাপে মোবাইল ভেরিফিকেশন করতে হবে। Verify বাটনে ক্লিক করার পর আপনার মোবাইলে একটি ৬ সংখ্যার OTP Code পাঠানো হবে।
এখানে ৬ ডিজিটের ওটিপি কোডটি লিখুন এবং আপনি ভবিষ্যতে ই রিটার্ন সিস্টেমে লগ ইন করার জন্য একটি পাসওয়ার্ড সেট করুন।
পাসওয়ার্ডটি অবশ্যই ইংরেজিতে Capital Letter + Small Letter + Number + Mark ব্যবহার করে সেট করবেন। যেমন হতে পারে- Dhaka123#
এরপর Submit বাটনে ক্লিক করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করুন। আশা করি আপনি সফলভাবে ই রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন করেছেন। এবার সিস্টেমে সাইন ইন করে ই রিটার্ন সাবমিট করতে পারবেন।
রিটার্ন দাখিলের পূর্বে অবশ্যই যা করবেনআয়কর রিটার্ন দাখিলের পূর্বে আয়কর নির্দেশিকা ২০২৫-২০২৬ পড়ে নিন। গতবছর রিটার্ন দাখিলে করলে তার কপি সঙ্গে রাখুন। আপনার আয় বিবরণী/ বেতন বিবরণী/ লাভ-লোকসান বিবরণী/ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যয়ের হিসাব সঙ্গে রাখুন। কর রেয়াত পাওয়ার জন্য আপনার বিনিয়োগ তথ্য দিন। কোন কিছু সম্পর্কে অবগত না থাকলে অভিজ্ঞ ব্যক্তির কাছ থেকে সহযোগিতা নিন। আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম ২০২৫-২০২৬বাংলাদেশের প্রত্যেক করদাতাকে প্রতিবছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। তবে ১ম বারের মত যারা রিটার্ন দাখিল করবে তারা জরিমানা ছাড়া পরবর্তী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা যাবে। আয়কর রিটার্ন দাখিলের পূর্বে ব্যক্তি শ্রেণীর আয়কর ২০২৫-২০২৬ পড়ে নিতে হবে।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের পদ্ধতি নিচে ধাপে ধাপে দেখানো হলো। অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য নিচে দেখানো ধাপগুলো ভালভাবে বুঝে শুনে ও সঠিক তথ্য দিয়ে সম্পন্ন করুন।
ধাপ ১ঃ ই রিটার্ন সিস্টেমে সাইন ইন এনবিআর ই রিটার্ন সিস্টেমে (e-Return System ) ভিজিট করুন এবং ২ নং অপশন e Return এ ক্লিক করুন।
ডান পাশ থেকে, আপনার TIN নম্বর, পাসওয়ার্ড ও ক্যাপচা লিখে Sign in বাটনে ক্লিক করে সাইন ইন করুন।
সাইন ই করার পর নিচের মত একটি ড্যাশবোর্ড পাবেন। এখানে বাম পাশ থেকে Return Submission অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ ২ঃ কর নির্ধারন তথ্য- Tax Assessment Information ই রিটার্ন ফরমের শুরুতে আপনাকে Tax Assessment Information বা আয়কর নির্ধারণ সংক্রান্ত তথ্য অর্থাৎ আয়ের সন ও উৎস সংক্রান্ত তথ্য দিতে হবে।
রিটার্ন ফরমের শুরুতে আমাদের Assessment Information এবং Heads of Income সম্পর্কিত দিতে হবে। এখানে প্রত্যেকটি অপশন বুঝিয়ে দেয়ার চষ্টা করব।
Return Scheme : Universal Self এটি হচ্ছে, আয়কর নির্ধারণের একটি পদ্ধতি- যাকে বাংলায় সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতি বলা হয়।
Assessment Year: 2025-2026 যে অর্থবছরে আমরা আয়কর রিটার্ন দাখিল করব. এটি সেই অর্থবছর। আমরা সাধারণত পূর্ববর্তী অর্থবছরের ( ১ জুলাই ২০২৪ থেকে ৩০ জুন ২০২৫) রিটার্ন ৩০ নভেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে দাখিল করে থাকি। তাই Assessment Year ২০২৫-২০২৬ হবে।
Income Year: 2024-2025 যেহেতু গত বছরের আয়কর রিটার্ণ সাবমিট করা হবে। এখানে আয়ের বছর হবে – ২০২৪-২০২৫।
Any Taxable Income in the above mentioned income year যদি ২০২৪-২৫ আয় বছরে আপনি করযোগ্য কোন আয় করে থাকেন, Yes দিবেন।
এখানে অনেকে মনে করতে পারেন, যে আমার আয় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার কম, তাই আমার করযোগ্য আয় নেই। এটি ভুল।
মনে রাখবেন, আপনি যত অল্পই আয় করুন না কেন আপনার আয় করযোগ্য হতে পারে। তবে করযোগ্য আয় যদি বছরে পুরুষের ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ও মহিলার ৪ লক্ষ টাকার কম হয়, আয়কর দিতে হবে না।
তাই, আপনার আয় থাকলেই আপনি করযোগ্য আয় (Taxable Income) অপশনে Yes দিবেন।
Any Income which is fully exempted from tax বাংলাদেশ সরকার কিছু আয়কে সম্পুর্ণভাবে করমুক্ত করেছে। এসব খাত থেকে আপনি যতই আয় করুন না কেন আপনাকে কোন আয়কর দিতে হবেনা।
যেমন, ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, সফটওয়ার ও আইটি ব্যবসাসহ আরো অনেক খাত। যদি আপনার এই ধরণের খাত থেকে আয় করে থাকেন, এই অপশনে Yes দিন।
Resident Status: Resident বাংলাদেশ বাসিন্দা হিসেবে আপনি অবশ্যই Resident অপশনটি সিলেক্ট করবেন।
Heads of Income এটি হচ্ছে আয়ের খাত বা উৎসসমূহ। এখান থেকে শুধুমাত্র আপনার উৎসমূহ বাছাই করবেন।
Salaries – চাকরিজীবিদের বেতন থেকে আয় থাকলে Interest on Securities – সঞ্চয়পত্র, বন্ড ইত্যাদির সুদ থেকে আয় থাকলে। Income from House Property – গৃহ সম্পত্তি, বাড়ি ভাড়া ইত্যাদি থেকে আয় Agricultural Income – কৃষি আয় Income from Business and Profession – ব্যবসা বা পেশা থেকে আয় Capital Gain – সম্পত্তি বিক্রয়ে অর্জিত মুনাফা Income from Other Source – উপরের উৎস বাদে অন্য যেকোন খাত থেকে আয় এ ধাপে আপনার বিভিন্ন আয়ের উৎসসমূহ সিলেক্ট করবেন। যদি আপনার আয়ের উৎস একমাত্র বেতন হয়ে থাকে, Salary বাছাই করবেন।
আর প্রথম ৬টি উৎসের কোনটি না হলে, ৭ নং Income from other source সিলেক্ট করবেন।
Any Income from the Following Sources তাছাড়াও নিচের কোন উৎস থেকে আপনার আয় থাকলে তাও বাছাই করুন। উল্লেখ্য, যদি আপনি রেমিটেন্স আয় করে থাকেন অবশ্যই (Income Earned Outside Bangladesh) এই অপশনটি সিলেক্ট করবেন।
As a Partner of Firm As a Member of an AoP Income Earned Outside Bangladesh Income Earned by the Spouse or Minor Children এরপর Save and Continue বাটনে ক্লিক করে পরের ধাপে যান।
আরও পড়ুন- আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা কত
ধাপ ৩ঃ আয়ের তথ্য – Income Information এ ধাপে আপনি যে যে উৎস থেকে আয় করেছেন তার তথ্য দিতে হবে। নিচের ছবিতে খেয়াল করুন।
এখানে প্রত্যেকটি আইটেম সম্পর্কে বিস্তারিত বলছি।
Additional Information Location of Main Source of Income- প্রধান আয়ের উৎসের এলাকা এখানে আপনি যে এলাকায় আয় করছেন বা বসবাস করছেন তা দিবেন।
City Corporation Area- যদি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় থাকেন Any Other Area- গ্রাম বা ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় থাকলে War wounded Gazetted Freedom Fighter- যদি আপনি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হন টিক দিন।
Person with Disability- যদি আপনি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হন টিক দিন।
Claim Benefit as a Parent/ Legal Guardian of a Person with Disability- যদি আপনি কোন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা শিশুর পিতা-মাতা বা আইনত অভিভাবক হয়ে থাকেন এখানে টিক দিন।
Claim Tax Rebate for Investment বাংলাদেশ সরকার কিছু বিশেষ ধরনের বিনিয়োগের উপর কর ছাড় (Tax Rebate) দিয়ে থাকে। যদি আপনার ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র বা অন্য কোন অনুমোদিত খাতে বিনিয়োগ থাকে, কর ছাড় পেতে এই অপশনে YES দিবেন।
Shareholder Director of a Company যদি কোন প্রাইভেট বা পাবলিক লিঃ কোম্পানীর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হয়ে থাকেন।
IT10B Requirement আয়কর রিটার্ন দাখিলের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে IT10B ফরম। যদি কোন ব্যক্তি করদাতার মোট সম্পদের পরিমাণ ৪০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি হয়ে থাকে, আবশ্যিকভাবে এই ফরমে তার সম্পদ-দায় ও আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখাতে হবে। যদি মোট সম্পদের পরিমাণ ৪০ লক্ষ টাকার কম হয়, এটি পূরণ করা বাধ্যতামূলক নয়।
তবে আপনার রিটার্ণ আরো সচ্ছ করতে চাইলে আপনি এটি পূরণ করতে পারেন। এছাড়া বেশিরভাগ আয়কর অফিসে সম্পদ-দায় ও ব্যয় বিবরণী ছাড়া রিটার্ন গ্রহণ করতে চায় না। তাই এটি পূরণ করাই সবচেয়ে ভাল।
Gross Wealth over 40,00,000? Own a Motor Car? Have House Property in any City Corporation? এগুলো থাকলে Yes এবং না থাকলে No দিন।
IT10B is not Mandatory. Still want to Submit?- IT10B হচ্ছে সম্পদ-দায় বিবরণী দেখানোর একটি ফর্ম। যদি আপনার মোট সম্পদের পরিমাণ ৪০ লক্ষ টাকার কম হয়ে থাকে, এই বিবরণী দাখিল করা বাধ্যতামূলক নয়।
তারপরও আপনি যদি এটি সাবমিট করতে চান, Yes দিন এবং Save & Continue বাটনে ক্লিক করে পরের ধাপে যান।
ধাপ ৪: আয়ের বিস্তারিত তথ্য – Income Details আয়ের উৎস অনুযায়ী তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করবেন। মনে রাখবেন এখানে বাৎসরিক আয় পূরণ করতে হবে।
যাদের আয় অন্যান্য উৎস দিয়েছেন, তার অন্যান্য উৎসের ক্যাটাগরিতে পাওয়া না গেলে List থেকে Any Other Income সিলেক্ট করবেন। নিচের ছবিতে দেখানো হয়েছে।
Tax Exempted Income – কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত আয়/ করমুক্ত আয় ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, সফটওয়ার ও আইটি ব্যবসা এবং এ ধরনের বিভিন্ন উৎস থেকে আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত। তাই এসব খাত থেকে আয় থাকলে তা এখানে সিলেক্ট করতে হবে। করমুক্ত আয় (Tax Exempted Income) এর অপশনটি নিচের ছবিতে দেখানো হলো।
Income Summery তারপর Income Summery তে আপনার বাৎসরিক আয়ের পরিমাণ ও ব্যবসায়িক খরচ দেখাতে হবে।
ধরুন, আপনি ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করে আয় করেন ২ লক্ষ টাকা (বাৎসরিক)। কনটেন্ট তৈরিতে আপনার ব্যয় ৫০ হাজার টাকা, ডিজাইনারের বেতন ১৫ হাজার টাকা, ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ বিল ১৫০০ টাকা ।
এক্ষেত্রে আপনার Gross Profit বা মোট আয় হবে ২ লক্ষ টাকা। General, Administrative and Other Expense বাবদ ( ৫০,০০০+১৫০০০+১৫০০)= ৬৬,৫০০ টাকা বাদ দিয়ে নীট আয় (Net Income) হবে ১,৩৩,৫০০ টাকা।
Income Summery পূরণ করে Save and Continue বাটনে ক্লিক করে পরের ধাপে যান।
ধাপ ৫: ব্যয়ের তথ্য – Expenditure এ ধাপে ব্যয়ের তথ্য দিতে হবে। যদি আপনার মোট সম্পদ ৪০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি হয়, অবশ্যই ব্যয়ের তথ্য বিবরণী আকারে পূরণ করতে হবে। এজন্য IT10B ফরম টি অবশ্যই পূরণ করতে হবে। ফরমটি পূরণের জন্য Yes দিন।
যদি আপনার মোট সম্পদ ৪০ লক্ষ টাকার কম হয়ে থাকে, আপনাকে এটি পূরণ না করলেও চলবে। এক্ষেত্রে আপনার বাৎসরিক পারিবারিক ও ব্যক্তিগত খরচসমূহের মোট পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে।
ব্যয়ের তথ্য পুরণ করে, Save and Continue বাটনে ক্লিক করে পরের ধাপে যান।
ধাপ ৬: সম্পদ ও দায় বিবরণী পূরণ যদি আপনি নতুন করদাতা হয়ে থাকেন, সম্পদের ঘরে আপনার সকল সম্পদের তথ্য ও ধরণ অনুযায়ী লিখুন। সঞ্চয়পত্র কত টাকা, অন্য কোন ডিপিএস, নগদ ও ব্যাংক জমা, ফার্ণিচার ও ইলেক্ট্রনিকস, স্বর্ণালংকার সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন। কোন তথ্য না লুকালেই ভাল। নিচের ছবিতে দেখুন।
কিভাবে সম্পদ ও দায় বিবরণী মিলকরণ করবেন নতুন করদাতা হলে নতুন রিটার্ন দাখিল করার ক্ষেত্রে নিচের নিয়মে সম্পদ ও দায় বিবরণী প্রস্তুত করবেন।
নীট সম্পদের পরিমাণ (মোট সম্পদ – দায় ও ঋণ) XXX (+) আয়বর্ষে আপনার মোট ব্যয় (জীবনযাপন, লোকসান, দান ও অন্যান্য সকল) XXX (-) আয়বর্ষে আপনার মোট আয় (করযোগ্য ও কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত সকল আয়) XXX (=) গত আয়বর্ষের শেষে সঞ্চিত অর্থ (অন্যান্য প্রাপ্তি হিসেবে দেখাবেন ) XXX
পুরাতন করদাতা হলে যদি আপনি গত বছর রিটার্ন দাখিল করে থাকেন। সেক্ষেত্রে গত বছরে প্রদর্শিত নিট সম্পদ নতুন রিটার্ন দাখিল করার ক্ষেত্রে নিচের নিয়মে সম্পদ ও দায় বিবরণী প্রস্তুত করবেন।
আপনার উল্লেখ করা সকল সম্পদের পরিমাণ
গত আয়বর্ষের নীট সম্পদ (পূর্ববর্তী বছরের রিটার্নে যত টাকা সম্পদ দেখানো হয়েছে) XXX (+) আয়বর্ষে আপনার মোট আয় (করযোগ্য ও কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত সকল আয়) XXX (-) নীট সম্পদের পরিমাণ (মোট সম্পদ – দায় ও ঋণ) XXX (=) আপনার মোট ব্যয় (জীবনযাপন, লোকসান, দান ও অন্যান্য সকল) XXX
উপরের ছবিতে সম্পদ ও দায় বিবরণীর সামারির দেখুন। Difference শুন্য হলে Save & Continue করে পরের ধাপে যান।
ধাপ ৭: আয়কর ও পরিশোধ – Tax and Payment যদি আপনি কোন উৎস কর এবং অগ্রিম কর (Source Tax and Advance Tax) পরিশোধ করে থাকেন, যেমন ব্যাংক ইন্টারেস্ট, বা সঞ্চয়পত্রের মুনাফা, তা এখন যুক্ত করতে হবে।
এজন্য (Have you paid any source tax, advance tax or any regular tax for 2023-2024 Assessment Year?) এখানে Yes এবং তার পরের অপশনেও Yes দিন।
আপনাকে উৎসে কর (Source Tax) যুক্ত করার সিস্টেমে নেয়া হবে।
উৎস কর এবং অগ্রিম কর আপনার মোট পরিশোধ্য কর (Tax Payable) থেকে স্বয়ংক্রীভাবে বাদ যাবে।
যদি আপনার আয়ের উপর কোন কর পরিশোধ করতে না হয়, Payable Amount শুন্য আসবে। যাদের রিটার্নে Payable Tax Amount শুন্য বা Zero হয়, তাদের রিটার্নকে জিরো রিটার্ণ (Zero Return) বা শুন্য রিটার্ন বলে।
এ পর্যায়ে আপনার আয়কর রিটার্ন পূরণ সমাপ্ত হয়েছে। এখন আপনি চাইলে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করতে পারেন অথবা রিটার্ন ফরমটির প্রিন্ট কপি নিয়ে সরাসরি আয়কর সার্কেলে জমা দিতে পারবেন।
অফলাইন রিটার্ন (Offline Return) বামপাশের Yellow কালারের বাটন-Proceed to offline (Paper) Return ক্লিক করে আয়কর রিটার্ন ফরমটির প্রিন্ট কপি নিন। তারপর ফরমটি আপনার সংশ্লিষ্ঠ আয়কর সার্কেল অফিসে জমা দিন। এরজন্য কোন ফি পরিশোধ করতে হবেনা। Proceed to Online Return ক্লিক করে অনলাইনে রিটার্ন সাবমিট করতে পারবেন।
অনলাইন রিটার্ন (Online Return) ডানপাশের Blue কালারের বাটন- Proceed to Online Return ক্লিক করে অনলাইনে রিটার্ন সাবমিট করতে পারবেন।
উপরের ছবির মত রিটার্ন ফরমের একটি প্রিভিউ দেখতে পারবেন। ফরমের একদম নিচে আপনার সম্মতি প্রদানের জন্য Verification and Signature অপশনে Yes দিতে হবে।
লাল বক্সে চিহ্নিত টিক বক্সে টিক দিন এবং নিচের Submit Return বাটনে ক্লিক করুন
সতর্কতা: এখানে চুড়ান্তভাবে আপনার কাছ থেকে রিটার্ন দাখিলের জন্য অনুমতি চাওয়া হচ্ছে। মনে রাখবেন, Yes বাটনে ক্লিক দেয়ার পর আপনার রিটার্ন জমা হয়ে যাবে। এর পর আপনি আর কোন পরিবর্তন করতে পারবেন না। তাই যদি, আপনার কোন সন্দেহ থাকে যে তথ্য গরমিল আছে কিনা, No বাটন ক্লিক করে পূনরায় ফরমটি চেক করে নিতে পারেন।
Yes বাটনে ক্লিক করার আগে অবশ্যই আপনি নিশ্চিত হবেন যে আপনার রিটার্ন ফরমের সকল তথ্য সঠিক আছে। সবকিছু ঠিক থাকলেই তবে Yes বাটনে ক্লিক করে রিটার্ন দাখিল করবেন।
ধাপ ৭: Download Acknowledgement Receipt সফলভাবে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া হলে, নিচের ছবির মত একটি মেসেজ দেখতে পাবেন। এখানে রিটার্ন সাবমিশনের একটি Reference ID এবং Acknowledgement Receipt ডাউনলোড করার অপশন দেখতে পাবেন।
আশা করি, আপনিও সফলভাবে অনলাইনে আপনার আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন যাচাইযদি আপনি অন্য কারো যেমন আয়কর পেশাজীবি বা আইনজীবির মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন জমা দেন, আপনি এখন অনলাইনেই যাচাই করতে পারেন আপনার রিটার্ন জমা দেয়া হয়েছে কিনা।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন যাচাই করার জন্য ভিজিট করুন- আয়কর রিটার্ন যাচাই । তারপর করবর্ষ সিলেক্ট করুন 2025-2026।
আপনার TIN নম্বর লিখুন এবং ক্যাপচা কোডটি নিচের বক্সে লিখুন। সবশেষে, Verify বাটনে ক্লিক করলে আপনার রিটার্ন যাচাই করতে পারবেন।
আয়কর রিটার্ন সময়মত জমা না হলে, আপনি নেটিশ পাওয়া ও জরিমানা প্রদানের ঝামেলায় পড়ে যেতে পারেন। তাই, নির্ধারিত সময়ের আগে আয়কর রিটার্ন যাচাই করে দেখতে পারেন।
আয়কর রিটার্ন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর পেতে নিচের প্রশ্ন-উত্তরগুলো পড়ে নিতে পারেন।
অনলাইনে ই রিটার্ন বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তরমোবাইলের মাধ্যমে ই-রিটার্ন জমা দেয়া যাবে? না, ই-রিটার্নকে সহজ ও user-friendly করার জন্য অনেক features দেয়া আছে, যার অনেকগুলো মোবাইল ডিভাইসে পাওয়া যাবে না। তাই ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটারে ই-রিটার্ন করুন।
ই রিটার্ন সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করতে কি লাগে? ই-রিটার্ন সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করতে টিআইএন এবং আপনার নিজের নামে নিবন্ধিত মোবাইল ফোন নম্বর লাগে। আপনার মোবাইল ফোন নম্বরটি ভেরিফাইড কি না তা আপনার ফোন থেকে *১৬০০১# নম্বরে ডায়াল করে জেনে নিতে পারেন।
ই রিটার্ন সিস্টেমে সাইন-ইন কিভাবে করবো? ই-রিটার্ন সিস্টেমে সাইন-ইন করতে হলে টিআইএন এবং পাসওয়ার্ড লাগবে। পাসওয়ার্ড পাওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। রেজিস্ট্রেশনের সময় আপনি নিজের পাসওয়ার্ড নিজে ঠিক করে নিবেন। পরবর্তীতে এই পাসওয়ার্ড দিয়ে সাইন ইন করবেন।
টিআইএন খোলার সময় যে ফোন নম্বর দিয়েছিলাম তা এখন আর নেই। আমি রেজিস্ট্রেশন করতে পারবো? পারবেন। আপনার নিজের নামে নিবন্ধিত (biometrically verified) যে কোনো মোবাইল ফোন দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন।
পাসওয়ার্ড সেট করার নিয়ম কি? পাসওয়ার্ড কমপক্ষে আট character বিশিষ্ট হবে। এর মধ্যে কমপক্ষে একটি করে lower case, upper case, digit (0-9) এবং special character (@, #, %, &, ইত্যাদি) থাকতে হবে। ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটার ব্যবহার করলে সিস্টেম আপনাকে গাইড করবে।
ই রিটার্নের ক্ষেত্রে কোন সাপোর্টিং কাগজপত্র সাবমিট করতে হবে? অনলাইন রিটার্ন দাখিলে কোনো কাগজপত্র সাবমিট করতে হয় না। আপনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থেকে নির্ভুলভাবে তথ্য এন্ট্রি দিন। অনলাইনে রিটার্ন submit করার সাথে সাথে সিস্টেমে আপনার অ্যাসেসমেন্ট হয়ে যাবে এবং আপনি প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পেয়ে যাবেন।
অনলাইনে রিটার্ন সাবমিট করার পর আবার কি সার্কেলে গিয়ে কাগজপত্র দাখিল করতে হবে? না, হবে না। অনলাইনে রিটার্ন submit করার সাথে সাথেই আপনার অ্যাসেসমেন্ট সম্পন্ন হয়ে যাবে।
আমার উৎস কর এবং অগ্রীম কর দেয়া আছে। আমি কি ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করতে পারবো? ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করে আপনার পেপার রিটার্ন তৈরি করে নিতে পারবেন। আপনার দেয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে ই-রিটার্ন সিস্টেম নির্ভুলভাবে আপনার রিটার্ন বানিয়ে দিবে, যা প্রিন্ট করে আপনি সার্কেলে জমা দিতে পারবেন। উৎস বা অগ্রীম করের অনলাইন ভেরিফিকেশনের জন্য অন্যান্য সিস্টেমের সাথে কানেক্টিভিটি (API) লাগে। API স্থাপনের কাজ চলমান আছে, যা শেষ হলে উৎস বা অগ্রীম কর প্রদানকারী করদাতাগণ অনলাইনে রিটার্ন submit করতে পারবেন।
অনলাইনে রিটার্ন সাবমিট করার সময় কোনো ট্যাক্স দিতে হলে আমি কি অনলাইন পেমেন্ট করতে পারবো? হ্যাঁ, পারবেন। অনলাইন রিটার্ন সাবমিট করার সময় কোনো ট্যাক্স দিতে হলে ই-রিটার্ন সিস্টেম থেকেই অনলাইন পেমেন্ট করা যাবে।
কিভাবে আয়কর রিটার্ন জমা হয়েছে কিনা যাচাই করব? আয়কর রিটার্ন যাচাই করার জন্য ভিজিট করুন verification.taxofficemanagement.gov.bd । এখানে করবর্ষ বাছাই করুন এবং আপনার TIN লিখুন। তারপর ক্যাপচা কোড পুরণ করে Verify বাটনে ক্লিক করে আয়কর রিটার্ন ভেরিফিকেশন করতে পারবেন।
: